সজনে পাতার পুষ্টি ও ব্যবহার
সজনে একটি অতি পরিচিত দামি এবং সুস্বাদু সবজি। সজনের ইংরেজি নাম Drumstick এবং বৈজ্ঞানিক নাম Moringa Oleifera. উৎপত্তিস্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ হলেও এ গাছ শীত প্রধান দেশ ব্যতীত সারা পৃথিবীতেই জন্মে। বারোমাসি সজনের জাত প্রায় সারা বছরই বার বার ফলন দেয়। গাছে সব সময় ফুল, কচি পাতা দেখা যায়। আমাদের দেশে ২-৩ প্রকার সজনে পাওয়া যায়। বসতবাড়ির জন্য সজনে একটি আদর্শ সবজি গাছ।
অত্যাশ্চার্য বৃক্ষ : দেশি-বিদেশি পুষ্টি বিজ্ঞানীরা সজনেকে অত্যাশ্চর্য বৃক্ষ বা অলৌকিক বলে অভিহিত করেছেন। কারণ এর পাতায় আট রকম অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিডসহ ৩৮% আমিষ আছে যা বহু উদ্ভিদেই নেই। সজনে সবজির চেয়ে এর পাতার উপকার আরও বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকায় এ গাছকে মায়েদের ‘উত্তম বন্ধু’ এবং পুষ্টির এক অনন্য সহজলভ্য উৎস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
– প্রতিদিন সকালে ১ গ্লাস মরিঙ্গা বা সজনে পাতার জুসই যথেষ্ট পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পুরণে !!
সজনে পাতার যে পুষ্টিগুণ রয়েছে-
১) সজনে পাতায় কমলা লেবুর তুলনায় ৭ গুণ ভিটামিন-সি রয়েছে।
২) দুধের তুলনায় ৪ গুণ ক্যালসিয়াম এবং ২ গুণ আমিষ রয়েছে।
৩) গাজরের তুলনায় ৪ গুণ ভিটামিন-এ পাওয়া যায়।
৪) কলার চেয়ে ৩ গুণ পটাশিয়াম বিদ্যমান।
সজনে পাতার এই পুষ্টিগুণ আমাদের কে ৩০০ রোগের প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে। তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য –
–কোষ্ঠ কাঠিন্য থেকে মুক্তি
– গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটি থেকে চিরতরে মুক্তি
– উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
– ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে রাখে
– হার্ট কে সুস্থ রাখে
– রক্ত স্বল্পতা দূর করে
– হাড় বা জয়েন্টের ব্যথা নিরাময়ে সহায়তা করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ পুষ্টিমান | |
---|---|
শক্তি | ৬৪ kcal (২৭০ কিজু) |
শর্করা | ৮.২৮ g |
খাদ্য আঁশ | ২.০ g |
স্নেহ পদার্থ | ১.৪০ g |
প্রোটিন | ৯.৪০ g |
ভিটামিন | পরিমাণ ও শতকরা হার |
ভিটামিন এ সমতুল্য | 0.378 মিগ্রা ৪৭% |
থায়ামিন (বি১) | ০.২৫৭ মিগ্রা ২২% |
রিবোফ্লাভিন (বি২) | ০.৬৬০ মিগ্রা ৫৫% |
নায়াসিন (বি৩) | ২.২২০ মিগ্রা ১৫% |
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) | ০.১২৫ মিগ্রা ৩% |
ভিটামিন বি৬ | ১.২০০ মিগ্রা ৯২% |
ফোলেট (বি৯) | 0.04 মিগ্রা ১০% |
ভিটামিন সি | ৫১.৭ মিগ্রা ৬২% |
খনিজ | পরিমাণ ও শতকরা হার |
ক্যালসিয়াম | ১৮৫ মিগ্রা ১৯% |
লৌহ | ৪.০০ মিগ্রা ৩১% |
ম্যাগনেসিয়াম | ১৪৭ মিগ্রা ৪১% |
ম্যাঙ্গানিজ | ০.৩৬ মিগ্রা ১৭% |
ফসফরাস | ১১২ মিগ্রা ১৬% |
পটাসিয়াম | ৩৩৭ মিগ্রা ৭% |
সোডিয়াম | ৯ মিগ্রা ১% |
জিংক | ০.৬ মিগ্রা ৬% |
অন্যান্য উপাদান | পরিমাণ |
পানি | ৭৮.৬৬ g |
একক μg = মাইক্রোগ্রাম • মিগ্রা = মিলিগ্রাম IU = আন্তর্জাতিক একক | |
†প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে। উৎস: ইউএসডিএ ফুডডাটা সেন্ট্রাল |
দুধের প্রায় সমান পুষ্টি
সজনে পাতাকে যদি তুলনা করেন কোনো খাবারের সাথে, তাহলে আমরা সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি খাবারের সাথে তুলনা করতে পারি। সেটি হচ্ছে গরুর দুধ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গরুর দুধের পুষ্টি এবং সজনে পাতার পুষ্টি প্রায় কাছাকাছি।
আমরা উপমহাদেশে বা বাংলাদেশে গরুর দুধ কেন খাই, কিসের জন্য খাই? মূলত কী লক্ষ্যে খাই?
গরুর দুধ আমরা খাই মূলত ক্যালসিয়ামের জন্য, প্রোটিনের জন্য, আমিষের জন্য। গরুর দুধ খেয়ে আমরা বলি, এটা একটা সুষম খাবার।
গরুর দুধ এবং সজনে পাতার মধ্যে পুষ্টিগত কোনো পার্থক্য নাই। গরুর দুধে যা আছে, সজনে পাতাতেও তা আছে। যে লক্ষ্যে আমরা মূলত গরুর দুধ খাই, সে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম আছে সজনে পাতায়। পর্যাপ্ত আমিষও আছে।
ঔষধি গুণ
সজনে পাতার কিছু ঔষধি গুণ আছে এবং ঔষধি গুণের কারণে আর্থ্রাইটিস নিরাময়ে এটি দারুণ কার্যকর। ইতোমধ্যেই এক্সপেরিমেন্ট এ পাওয়া গেছে যাদের হাঁটু ব্যথা আছে, সজনে পাতার জুস খান। সজনে পাতার ভর্তা খান অথবা গুঁড়া খান। ছয় মাস খান। দেখেন আপনার আর্থ্রাইটিসের কী অবস্থা হয়।
শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে সজনে পাতা। আমরা জানি যে, আমাদের শরীরে ৭০ থেকে ১০০ ট্রিলিয়ন সেল বা কোষ আছে। প্রত্যেকটা কোষের ভেতরে লক্ষাধিক রিঅ্যাকশন হয় প্রত্যেক দিন; প্রতি মুহূর্তে এবং এই লক্ষাধিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, বিক্রিয়া হতে গিয়ে ভয়াবহ কিছু টক্সিন, কিছু ক্ষতিকর পদার্থ সেলের ভেতরে তৈরি হয়। এগুলোকে আমরা বলি বর্জ্য পদার্থ, টক্সিন, ফ্রি রেডিক্যাল। এগুলো যদি সেলের ভেতরে থেকে যায়, আপনি কোনো দিন সুস্থ থাকতে পারবেন না। কেউ আপনাকে সুস্থ করতে পারবেন না।
সজনে পাতা কীভাবে খাবেন
আমরা মনে করি যে, ফুল সিজনে সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে এটিকে আপনি জুস করে খাবেন। কিছু সজনে পাতা নিন। ভালো করে পরিষ্কার করে নিয়ে এটাকে ব্লেন্ডারে নিন। কিছু পানি যোগ করে টেস্টের জন্য কিছু আদা, কিছু জিরা, একটু বিট লবণ দিতে পারেন। ভালো করে ব্লেন্ড করেন। এরপর ছেঁকে নিন। ছেঁকে নিয়ে খাওয়ার সময় একটু মধু দিয়ে খেয়ে নিন। পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ জুসটি আপনার খাওয়া হয়ে গেল।
যদি আপনার জুস বানাতে ঝামেলা হয় অথবা সব দিন যদি জুস খেতে না পারেন, ভর্তা খান, তবে এটা কাঁচা হলে বেস্ট। যখন আপনি সিদ্ধ করলেন, এই যে নানাবিধ যে উপাদানগুলো আছে, এটি নষ্ট হয়ে যেতে থাকবে। সে জন্য কাঁচা পাতা ভালো করে বেটে নিয়ে এটাকে টেস্টি করার জন্য যা যা লাগে…সেখানে আপনি রসুন দেন, আদা দেন, মরিচ দেন, পেঁয়াজ দেন, যা যা দিলে টেস্টি হয়, দেন। তারপর আপনি খান। সিজনে।
অফ সিজনে গুঁড়া। সজনে পাতাকে আপনি সিজনে ভালো করে রোদে শুকান। শুকানোর পর এটাকে ক্রাশ করে ফেলেন। ছয় মাস এটা চমৎকার থাকবে এবং এক থেকে দুই চা চামচ সজনে পাতা যথেষ্ট আপনার পুষ্টির জন্য। তাই আমরা বলব যে, নিজের দেশের এই অ্যাভেইলেবল এই পাতাটিকে অবহেলা করবেন না।
আজ না হলে কাল থেকে শুরু করুন। অফ সিজনে আপনি গুঁড়ো সংগ্রহ করুন। প্রতিদিন এক চামচ সকালে, এক চামচ রাত্রে। ছয় মাস পর আপনি আপনার স্ট্রেংথ, আপনার কর্মক্ষমতা দেখে নিজেই বিস্মিত হবেন।
সতর্কতা
সজনে এর মূল অনেক সময় বিষাক্ত হতে পারে, যা স্নায়ুকে অবশ করে দিতে পারে। তাই খাওয়ার ক্ষেত্রে এটি বর্জন করাই শ্রেয়।এছাড়া এর বীজ মাছ এবং খরগোশ এর জন্যেও বিষাক্ত হতে পারে। তাই সতর্কতা অবলম্বন আবশ্যক।
Mr. Royal Express
Moringa Leaf Powder