হ্যাঁ, দারুচিনি গুঁড়োর মেয়াদ শেষ হতে পারে। যদিও এটি সাধারণত নষ্ট হয় না , তবে সময়ের সাথে সাথে এর স্বাদ হ্রাস পেতে পারে। সর্বোত্তম গুণমান নিশ্চিত করতে, আপনার দারুচিনি গুঁড়া একটি শীতল, অন্ধকার জায়গায় একটি বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করুন। দূর্গন্ধ বা রঙের পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন; আপনি যদি কোনো লক্ষ্য করেন, এটি প্রতিস্থাপন করার সময় হতে পারে।
দারুচিনি কি?
দারুচিনি একটি মশলা। (ইংরেজি নাম: Cinnamon) (বৈজ্ঞানিক নাম: Cinnamomus Zeylanicum)। স্বাভাবিক পরিবেশে এই বৃক্ষের উচ্চতা দশ থেকে পনের মিটার পর্য্যন্ত হয়ে থাকে। আদি নিবাস শ্রীলংকায়। আজকাল ইন্দোনেশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ ও চীন প্রভৃতি দেশে ও উৎপাদিত হচ্ছে দারুচিনি । দেখতে কিছুটা তেজপাতা বৃক্ষের মতো এই বৃক্ষের চামড়াটা মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দারুচিনির সুগন্ধ যুক্ত তেল ও পাওয়া যায়।
দারুচিনি অন্যান্য গাছের ছালের চেয়ে পাতলা, হলুদ এবং বেশি সুগন্ধযুক্ত। এর ফুল ছোট, সবুজ বা সাদা রঙের হয়। দারুচিনি অনেক রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।
মসলা হিসেবে দারুচিনির উপকার বলে শেষ করা যাবে না। এটি হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বব্যাপী পরিচিত এর ঔষধি গুণাবলির জন্য। আর অবাক করা বিষয় হচ্ছে— মানুষ এটির ঔষধি গুণাবলি হাজার বছর আগে থেকেই যেগুলো জানত তার বাস্তব প্রমাণও মিলছে আধুনিক বিজ্ঞানে।
দারুচিনির পুষ্টিগুণ
এটি পুষ্টিকর এবং প্রচুর ভিটামিনে পূর্ণ।
১০০ গ্রাম দারুচিনিতে | পানি ১০.৫৮ গ্রাম |
এনার্জি | ২৪৭ কিলোক্যালরি |
প্রোটিন | ৩.৯৯ গ্রাম |
ফ্যাট | ১.২৪ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ৮০.৫৯ গ্রাম |
শর্করা | ২১৭ গ্রাম |
দারুচিনির উপকারিতা
দারুচিনিতে রক্তের শর্করার রোধক সহ উন্নত অসাধারণ ঔষধি গুণাবলী রয়েছে যা প্রদাহ কমাতে এবং স্নায়বিক স্বাস্থ্য উন্নীত করতে সহায়তা করে। এছাড়াও সুগন্ধি মসলা হিসাবে দারুচিনি ব্যপকভাবে পরিচিত। শুধু রান্নায় গন্ধ বৃদ্ধি নয়, শরীর ও ত্বক উভয়ের জন্যই দারুচিনির ব্যবহার করা যায়। চলুন জেনে নেই দারুচিনি আমাদের শরীরের কি কি উপকারিতা সাধন করে থাকেঃ
১। অনেকেই জয়েন্টের সমস্যায় ভুগছেন। এক্ষেত্রে দারুচিনিকে জয়েন্টের ব্যথা কমানোর ঔষুধ হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। উষ্ণ গরম পানির মধ্যে এক চামচ মধু আর দারুচিনি গুড়ো ভালভাবে মিশিয়ে নিন, এরপর শরীরের ব্যথা স্থানে আস্তে আস্তে মালিশ করুন। ২-৩ দিন ভালভাবে মালিশ করুন। পার্থক্যটা নিজেই বুঝতে পারবেন।
২। দারুচিনি পেটের জন্য ভীষণ উপকারি। এটি অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করে ও পেটের ব্যথা উপশম করে। পেট পরিষ্কার করতে, রাতে শোবার আগে, দারুচিনির সঙ্গে হরীতকীর গুঁড়া মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এসিডিটি রোধ করতে মধুর সাথে দারুচিনি মিশিয়ে খেলে এসিডিটি ভালো হয়ে যায়।
৩। প্রতিদিন আধা চা চামচ দারুচিনির গুড়ো রক্তে খারাপ কোলস্টেরল এলডিএল এর মাত্রা কমায়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিষন্ত্রণ করে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
৪। ঈস্ট ছত্রাক ঘটিত ইফেকশন প্রতিরোধ করতে দারুচিনির গুণাবলী চমৎকার ভাবে কাজ করে। হৃদরোগীদের জন্যেও দারুচিনি খুব উপকারী। এটি রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে।
৫। দারুচিনি মরণব্যাধি লিম্ফোসাইটিক লিউকোমিয়ার বিস্তার রোধ করে। রক্ত জমাট না বাঁধার অসুখ হিমোফিলিয়া প্রতিরোধ করতে দারুচিনি বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৬। বাতের ব্যথা ও শরীরের হাড়ের ব্যথায় আধা চা চামচ দারুচিনির গুড়ো এক চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে ব্যথা দূর হয়। তাছাড়া, দারুচিনি মিশ্রিত সরিষার তেল গায়ে মালিশ করলে ব্যথা ভালো হয়।
৭। ঠাণ্ডায় গলা ব্যথা বা খুশখুশে কাশিতে মধু চায়ের সাথে দারুচিনি মিশালে আরাম পাওয়া যায়।
৮। ত্বকের ঔজ্জ্বল্যতা বৃদ্ধিতে দারুচিনি, দূর্বাঘাস ও হলুদ সমপরিমানে বেটে মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ভালো। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ রোধ করতে দারুচিনি উপকারী।
৯। নিয়মিত দারুচিনি খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
১০। আর্থারাইটিসের সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা এক কাপ গরম পানির মধ্যে দু চামচ মধু আর দারুচিনি গুড়ো মিশিয়ে সকাল সন্ধ্যা খেতে পারেন।
দারুচিনির পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া
যে কোন খাবার অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া উচিত নয়। এতে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হয়। ঠিক তেমনই অতিরিক্ত দারুচিনি খেলে লিভারের সমস্যা হতে পারে। যেসব ডায়াবেটিস রোগীরা রক্ত তরল করার ওষুধ নিয়মিত খান, তাদের বেশি মাত্রায় দারুচিনি না খাওয়াই ভালো।
দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম
দারুচিনি সাধারণত গরম মশলা হিসেবে রান্নায় ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে দারুচিনি গুঁড়ো করে সেটা বিভিন্ন খাবারে মিশিয়ে খাওয়া যায় কিংবা চায়ের সঙ্গেও দারুচিনি মিশিয়ে খাওয়া যায়। এতে দারুন উপকার রয়েছে।